---Advertisement---

উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর জেরুজালেম বিজয়

---Advertisement---

উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর জেরুজালেম বিজয়
ইসলামের ইতিহাসে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর ন্যায়পরায়ণতা, প্রজ্ঞা এবং সাহসিকতা মুসলিম উম্মাহর জন্য চিরকাল অনুকরণীয়। তাঁর শাসনামলে ইসলামের বিস্তৃতি যেমন ঘটেছিল, তেমনি প্রশাসনিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও এসেছিল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এমনি এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো জেরুজালেম (বায়তুল মুকাদ্দাস) বিজয়।
৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে), মুসলিম বাহিনী হযরত উমর (রাঃ)-এর নেতৃত্বে জেরুজালেমের দিকে অগ্রসর হয়। দীর্ঘদিন ধরে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা এই পবিত্র শহরটি মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, এটি ছিল বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত স্থান এবং ইসলামের প্রথম কিবলা।
জেরুজালেমের খ্রিস্টান গভর্নর সোফ্রোনিয়াস দীর্ঘ অবরোধের পর মুসলিমদের কাছে শহর হস্তান্তরের জন্য রাজি হন, তবে তার একটি শর্ত ছিল। তিনি চেয়েছিলেন খোদ খলিফা উমর (রাঃ) এসে শহরের চাবি হস্তান্তর গ্রহণ করবেন। গভর্নরের এই অনুরোধের কথা যখন উমর (রাঃ)-এর কাছে পৌঁছাল, তখন তিনি মদিনা থেকে জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
ঐতিহাসিক বিবরণ অনুযায়ী, উমর (রাঃ) যখন জেরুজালেমের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর সাথে ছিল কেবল একটি উট এবং একজন ভৃত্য। পালাক্রমে তাঁরা উটের পিঠে আরোহণ করছিলেন। যখন জেরুজালেমের কাছে পৌঁছানো গেল, তখন উটের পিঠে বসার পালা ছিল ভৃত্যের। উমর (রাঃ) পায়ে হেঁটে শহরে প্রবেশ করেন। এমন সাদাসিধে বেশভূষা এবং বিনয় দেখে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন বিস্মিত হয়েছিলেন।
সোফ্রোনিয়াস উমর (রাঃ)-কে শহরের চাবি হস্তান্তর করেন। উমর (রাঃ) অত্যন্ত সম্মানের সাথে তা গ্রহণ করেন এবং জেরুজালেমের জনগণের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি একটি ঐতিহাসিক চুক্তিপত্র (উমরের চুক্তি) স্বাক্ষর করেন, যেখানে জেরুজালেমের খ্রিস্টানদের জীবন, সম্পত্তি এবং উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এই চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল যে খ্রিস্টানদের তাদের ধর্ম পালনে কোনো বাধা দেওয়া হবে না এবং তাদের উপাসনালয়গুলো অক্ষত থাকবে।
জেরুজালেমে প্রবেশের পর উমর (রাঃ) সেই স্থানে যান, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মিরাজের রাতে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে সালাত আদায় করেন এবং মুসলমানদের জন্য কিবলা নির্ধারণ করেন। উমর (রাঃ)-এর এই বিজয় কোনো রক্তপাত বা ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে অর্জিত হয়নি, বরং এটি ছিল একটি শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর এবং ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা।
উমর (রাঃ)-এর জেরুজালেম বিজয় শুধু একটি শহরের দখল ছিল না, এটি ছিল ইসলামের সহিষ্ণুতা, ন্যায়বিচার এবং অন্যের ধর্মের প্রতি সম্মানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর সেই সময়ের পদক্ষেপ আজও মুসলিম ও অমুসলিম ঐতিহাসিকদের কাছে প্রশংসিত। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে ইসলাম শান্তি ও সহাবস্থানের ধর্ম এবং বিজয়ের পরেও ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করাই এর মূল লক্ষ্য।
কেমন লাগলো এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি? আপনি কি অন্য কোনো সময়ের বা অন্য কোনো বিষয়ের ইতিহাস জানতে চান?

Leave a Comment