প্রাথমিক জীবন ও পারিবারিক পরিচয়
নওশাদ সিদ্দিকী ১৯৯৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ফুরফুরা শরীফের এক প্রভাবশালী সুফি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলি আকবর সিদ্দিকী ছিলেন ফুরফুরা শরীফের পীর জুলফিকার আলি সিদ্দিকীর পুত্র। এই বংশপরম্পরায় নওশাদ ফুরফুরা শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীর মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকীর চতুর্থ প্রজন্মের উত্তরসূরি । তাঁর বড় ভাই আব্বাস সিদ্দিকী ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (ISF) নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা। নওশাদ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পারিবারিক ধর্মীয়-সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হন ।
রাজনৈতিক উত্থান ও ISF-এর প্রতিষ্ঠা
২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি আব্বাস সিদ্দিকী ISF প্রতিষ্ঠা করলে নওশাদকে দলের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। এই দলটি পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ISF বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নওশাদ প্রার্থী হন এবং ২৬,১৫১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন । এই নির্বাচনে জোটের একমাত্র জয়ী প্রার্থী ছিলেন নওশাদ, যা তাঁর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে।
বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ
নওশাদের রাজনৈতিক যাত্রা বিতর্কমুক্ত নয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ISF-এর প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং দীর্ঘদিন জেলে রাখা হয়। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং মন্তব্য করেন, “এত দিন জেলে রাখার যৌক্তিকতা নেই” । এছাড়া, নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর বারবার আদালতের শরণাপন্ন হওয়া এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তাকে অপর্যাপ্ত মনে করার ঘটনাও আলোচিত হয় ।
জোট রাজনীতিতে ভূমিকা ও উত্তরণ
ISF প্রাথমিকভাবে বামফ্রন্টের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকলেও সম্পর্কের টানাপোড়েন লক্ষণীয়। ২০২৪ সালের উপনির্বাচনে সিপিআইএমের প্রচারে নওশাদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সিপিআইএম নেতারা তাঁর সহযোগিতা চাইলেও তিনি প্রচার এড়িয়ে যান, যা জোটের ভেতর অনাস্থার ইঙ্গিত দেয় । অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে “সেটিং” করার গুজব তিনি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং দাবি করেন, “বাংলার মানুষ এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে না” ।
যুবশক্তির সংগঠক ও সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার
নওশাদ তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। ফেসবুক ও ইউটিউবে তাঁর বক্তৃতা এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে সরব ভূমিকা যুবসমাজকে আকর্ষণ করে। তিনি শিক্ষা, বেকারত্ব ও ধর্মীয় সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে থাকেন। তাঁর ভাষ্য, “কর্মীরা জানে, তাদের ভাইজান একজনই—যিনি গোটা রাজ্যে ছুটে বেড়ান” ।
বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ
২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নওশাদ ভাঙড়ের বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করছেন । নিরাপত্তা ঝুঁকি ও রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও তিনি প্রান্তিক মানুষের সমস্যা নিয়ে সক্রিয়। তাঁর লক্ষ্য, ISF-কে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ বজায় রাখা।
উপসংহার
নওশাদ সিদ্দিকী কেবল একটি রাজনৈতিক দলের নেতা নন, বরং এক যুগের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রতিচ্ছবি। ফুরফুরা শরীফের ঐতিহ্য ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা তাঁর ব্যক্তিত্ব পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁর দৃঢ়তা এবং যুবশক্তির সংগঠক হিসেবেই তিনি আজও প্রাসঙ্গিক।*
প্রাথমিক জীবন ও পারিবারিক পরিচয়
নওশাদ সিদ্দিকী ১৯৯৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ফুরফুরা শরীফের এক প্রভাবশালী সুফি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলি আকবর সিদ্দিকী ছিলেন ফুরফুরা শরীফের পীর জুলফিকার আলি সিদ্দিকীর পুত্র। এই বংশপরম্পরায় নওশাদ ফুরফুরা শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীর মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকীর চতুর্থ প্রজন্মের উত্তরসূরি । তাঁর বড় ভাই আব্বাস সিদ্দিকী ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (ISF) নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা। নওশাদ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পারিবারিক ধর্মীয়-সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হন ।
রাজনৈতিক উত্থান ও ISF-এর প্রতিষ্ঠা
২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি আব্বাস সিদ্দিকী ISF প্রতিষ্ঠা করলে নওশাদকে দলের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। এই দলটি পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ISF বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নওশাদ প্রার্থী হন এবং ২৬,১৫১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন । এই নির্বাচনে জোটের একমাত্র জয়ী প্রার্থী ছিলেন নওশাদ, যা তাঁর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে।
বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ
নওশাদের রাজনৈতিক যাত্রা বিতর্কমুক্ত নয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ISF-এর প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং দীর্ঘদিন জেলে রাখা হয়। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং মন্তব্য করেন, “এত দিন জেলে রাখার যৌক্তিকতা নেই” । এছাড়া, নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর বারবার আদালতের শরণাপন্ন হওয়া এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তাকে অপর্যাপ্ত মনে করার ঘটনাও আলোচিত হয় ।
জোট রাজনীতিতে ভূমিকা ও উত্তরণ
ISF প্রাথমিকভাবে বামফ্রন্টের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকলেও সম্পর্কের টানাপোড়েন লক্ষণীয়। ২০২৪ সালের উপনির্বাচনে সিপিআইএমের প্রচারে নওশাদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সিপিআইএম নেতারা তাঁর সহযোগিতা চাইলেও তিনি প্রচার এড়িয়ে যান, যা জোটের ভেতর অনাস্থার ইঙ্গিত দেয় । অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে “সেটিং” করার গুজব তিনি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং দাবি করেন, “বাংলার মানুষ এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে না” ।
যুবশক্তির সংগঠক ও সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার
নওশাদ তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। ফেসবুক ও ইউটিউবে তাঁর বক্তৃতা এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে সরব ভূমিকা যুবসমাজকে আকর্ষণ করে। তিনি শিক্ষা, বেকারত্ব ও ধর্মীয় সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে থাকেন। তাঁর ভাষ্য, “কর্মীরা জানে, তাদের ভাইজান একজনই—যিনি গোটা রাজ্যে ছুটে বেড়ান” ।
বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ
২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নওশাদ ভাঙড়ের বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করছেন । নিরাপত্তা ঝুঁকি ও রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও তিনি প্রান্তিক মানুষের সমস্যা নিয়ে সক্রিয়। তাঁর লক্ষ্য, ISF-কে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ বজায় রাখা।
উপসংহার
নওশাদ সিদ্দিকী কেবল একটি রাজনৈতিক দলের নেতা নন, বরং এক যুগের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রতিচ্ছবি। ফুরফুরা শরীফের ঐতিহ্য ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা তাঁর ব্যক্তিত্ব পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁর দৃঢ়তা এবং যুবশক্তির সংগঠক হিসেবেই তিনি আজও প্রাসঙ্গিক।